কর্ণওয়ালিসের কার্যকাল শেষে স্যার জন শোর ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল পদে নিযুক্ত হন। পিটস্ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৭৮৪ তে দেশীয় রাজ্য গুলির প্রতি যে নন-ইন্টারভেনশন পলিশি বা হস্তক্ষেপ-বর্জন ও নিরপেক্ষতা নীতির কথা বলা হয়েছিল, জন শোর তা বিশেষ ভাবে অনুসরণ করেন।
মারাঠারা নিজামকে আক্রমণ করার উদ্যোগ নিলে নিজাম যখন কোম্পানির কাছে সাহায্য চাইতে যান, জন শোর এই হস্তক্ষেপ-বর্জন নীতি অনুসরণ করেই মারাঠা-নিজাম যুদ্ধে একেবারে নিরপেক্ষ থাকেন। খর্দার যুদ্ধে (১৭৯৫) মারাঠারা নিজামকে শোচনীয় ভাবে পরাস্ত করে। ফলে ইংরেজ-মারাঠা-নিজাম শক্তিসাম্য ভেঙে যায়।
পার্সিভাল স্পিয়ারের মত ঐতিহাসিকরা স্যার শোরের এই নিরপেক্ষতা নীতির অন্ধভাবে অনুসরণ কে অযৌক্তিক মনে করেছেন, কারণ ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে র ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ১৭৯৩-৯৪ এর রাজনৈতিক পরিস্থিতি অপেক্ষা অনেকটাই আলাদা ছিল।
কিন্তু মহীশূর যুদ্ধের ফলে কোম্পানির অর্থ ভান্ডার প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছিল। তাই বাণিজ্য ও শান্তি নীতির দ্বারা কোম্পানির ক্ষমতাকে সুসংহত করাকেই স্যার শোর শ্রেয় মনে করেন।
সুতরাং বলা যায় যে পিটস্ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট লঙ্ঘন করে ভারতে রাজ্য বিস্তারের যে নীতি কর্ণওয়ালিস প্রবর্তন করেছিলেন, জন সোরের সময় মধ্যবর্তী এই পাঁচ বছর বাদ দিয়ে, লর্ড ওয়েলেসলির শাসনকালে তা চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল।
কিন্তু অযোধ্যার ক্ষেত্রে তিনি হস্তক্ষেপ বর্জন নীতি থেকে আবার দূরে সরে আসেন। অযোধ্যার নবাব আসফউদ্দৌলার মৃত্যুর পর তার পালিত পুত্র ওয়াজির আলি ও মৃত নবাবের ভাই সাদাত আলির মধ্যে সিংহাসন সংক্রান্ত বিরোধ দেখা দিলে, স্যার শোর সাদাত আলিকে সিংহাসন প্রার্থী হিসাবে সমর্থন করেন। তাঁর উপর এক সন্ধি চাপিয়ে এলাহাবাদ দূর্গ কোম্পানির দখলে আনেন এবং নবাবের বৈদেশিক সম্পর্ক কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য করেন।
আসলে অযোধ্যায় হস্তক্ষেপ করলে বিপদের আশঙ্কা সেরকম কিছু ছিল না। অযোধ্যা আগেই কোম্পানির প্রায় আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়েছিল, তাই অযোধ্যায় হস্তক্ষেপে পিটস্ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট অনুসারে কোন প্রত্যক্ষ বাধা ছিল না। অযোধ্যার দুর্বলতার সুযোগে শোর নগ্ন আগ্রাসন নীতি গ্রহণ করেছিলেন।