লর্ড কর্ণওয়ালিসের মৃত্যুর পর স্যার জর্জ বার্লো গভর্নর জেনারেল পদে নিযুক্ত হন। লর্ড ওয়েলেসলির অধীনে কাজের সুবাদে ভারত সম্পর্কে বার্লোর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ছিল। ভারতীয় রাজাদের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ককে স্থিতিশীল করতে তিনি প্রথমেই সচেষ্ট হন।
১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে দৌলত রাও সিন্ধিয়ার সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করে বার্লো তাঁকে গোয়ালিওর ও গোহাড ফিরিয়ে দেন। রাজপুতানা ও দাক্ষিণাত্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সিন্ধিয়ার অধিকার দৃড় হয়। অনুরূপে হোলকারকেও চম্বলের দক্ষিণাঞ্চল ভোগ করতে দেওয়া হয়।
বার্লোর এই বন্দোবস্তের ফলে গঙ্গা-যমুনা দোয়াব, আগ্রা, দিল্লী ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল কোম্পানির অধিকারে আসে। দিল্লীতে কোম্পানি মোগল বাদশাহের বকলমে শাসন জারি রাখে।
অপরদিকে অযোধ্যা, মহীশূর ও অন্যান্য দেশীয় রাজ্যের ক্ষেত্রে ওয়েলেসলি যে বন্দোবস্ত করে গিয়েছিলেন, বার্লো সেই স্থিতাবস্থাই বজায় রাখেন। আর অন্যান্য বাকি দেশীয় রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে কোনরকম অধিগ্রহণ নীতি পরিত্যাগ করে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা নীতি গ্রহণ করা হয়। বলা বাহুল্য, ইংল্যান্ডের পরিচালক সভা এই নিরপেক্ষতা নীতি গ্রহণের জন্য বার্লো কে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এসব দেখে হায়দ্রাবাদের নিজামও ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ওয়েলেসলির সঙ্গে স্বাক্ষরিত অধীনতামূলক মিত্রতার চুক্তি সংশোধনের জন্য পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও এর সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে বার্লো কে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু বার্লো কে রাজী করানো যায়নি।
কিন্ত এই নিরপেক্ষতার আবেশে, রাজপুত রাজ্যগুলিকে মারাঠা আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য লর্ড ওয়েলেসলি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা ভঙ্গ করা অদূরদর্শিতা প্রমাণিত হয়। রাজপুত রাজ্যগুলিতে পুনরায় মারাঠা আক্রমণ ও লুঠপাট আরম্ভ হয়। তবে একথাও সত্যি যে রাজপুত রাজ্যগুলি যে করুণ অবস্থায় চলছিল, তাদের রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ কোম্পানির পক্ষে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠত ।
বার্লোর শাসনকালে ভেলোরে ধর্মীয় কারণে সিপাহী সেনারা বিদ্রোহ করলে (১৮০৬), তিনি তা কঠিন হাতে দমন করেন।