লর্ড মিন্টোর পর আর্ল অফ ময়রা (Earl of Moira) ৫৯ বছর বয়সে ভারতের গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে গোর্খা বা নেপাল যুদ্ধের পর তিনি লর্ড হেস্টিংস উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রিন্স রিজেন্ট এর বিশিষ্ট বন্ধু ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের খ্যাতনামা সদস্য। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন তিনি ওয়েলেসলির রাজ্যবিস্তার নীতি বিশেষত মহীশূর নীতির তীব্র সমালোচনা করে তাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু ভারতে পদার্পণ মাত্র তাঁর সেই দৃষ্টিভঙ্গীর আশ্চর্যজনক ভাবে আমূল পরিবর্তন দেখা যায়। ভারতে এসে তিনি তাঁর পূর্বসূরী লর্ড মিন্টোর সমালোচনা করে পরিচালক সভার কাছে অভিযোগ জানান যে মিন্টো যে সমস্ত সমস্যার সৃষ্টি করে গেছেন তা সমাধানের জন্য অস্ত্র ব্যতীত আর কোন গতি নেই। বলা বাহুল্য ওয়েলেসলির রাজ্য বিস্তার নীতিকে লর্ড হেস্টিংস ই পরিণতি দান করেন। তবে সাথে সাথে বিজিত অঞ্চল গুলিতে সুশাসন প্রবর্তন করার জন্যও তিনি সমান ভাবে সচেষ্ট হন। ঐতিহাসিক এম এস মেহেতা তাই তাঁকে ওয়েলেসলি ও বেন্টিংক এর মধ্যবর্তী রাজনীতিবিদ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।
তাঁর পররাষ্ট্র নীতির প্রধান উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ইঙ্গ নেপাল যুদ্ধ। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে গোর্খা সেনাপতি অমর সিং থাপার নেতৃত্বে গোর্খারা ভূতওয়াল আক্রমণ করলে, লর্ড হেস্টিংস বেজায় ক্ষিপ্ত হন। প্রথমে ইংরেজ সেনাপতি জিলেসপির নেতৃত্বে যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু পার্বত্য যুদ্ধে দক্ষ গোর্খারা সংখ্যার নিরিখে তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ হয়েও ৩৪,০০০ ইংরেজ বাহিনীকে একেবারে বিধ্বস্ত করে তোলে। কালাঙ্গার ও জৈতকের যুদ্ধে পরাজয়ের পর ইংরেজ দের সামরিক মর্যাদা একেবারে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। এই সংকটে লর্ড হেস্টিংস ব্রিটিশ সেনাপতি ডেভিড অক্টারলোনিকে নেপাল যুদ্ধের সর্বময় দায়িত্ব তুলে দেন। তিনি বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে গোর্খা সেনাপতি অমর সিং থাপা কে মকানপুরের যুদ্ধে (১৮১৬) পরাজিত করেন। সগৌলির সন্ধি (১৮১৬) দ্বারা ইঙ্গ নেপাল যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। গাড়োয়াল, কুমায়ুন ও তরাই অঞ্চলে ব্রিটিশ আধিপত্য স্থাপন হয় এবং কাঠমান্ডুতে নেপাল দরবারে একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট নিয়োগ করা হয়। সেনাপতি অক্টারলোনি র কীর্তিকে অমর করার উদ্দেশ্যে কলকাতা ময়দানে বিখ্যাত “অক্টারলোনি মনুমেন্ট” নির্মিত হয়, যা বর্তমানে “শহীদ মিনার” নামে পরিচিত। তবে ইংরেজ শক্তি গোর্খা দের সামরিক দক্ষতা স্বীকার করে নেপালের স্বাধীনতাকে মান্য করার নীতি গ্রহন করে, যা ইঙ্গ-নেপাল মিত্রতার সূচনা করে। ইংরেজ সেনাদলে গোর্খা দের ব্যাপক ভাবে নিয়োগ করা হয়। ১৮৫৭ র মহাবিদ্রোহে গোর্খা সেনারা কোম্পানির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে দ্বিধা করেনি।
(* চলবে)