চার্নোবিল ছিল পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি শহর এবং বর্তমানে এটি ইউক্রেনের অর্ন্তভুক্ত।
১৯৮৬ সালে ঘটে যাওয়া চার্নোবিল দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের গঠন এবং অপেক্ষাকৃত কম ‘স্কিল’ সম্পন্ন অপারেটিং স্টাফদের দায়ী মনে করা হয়। এই বিস্ফোরণের ফলে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরটির ‘কোর’ এ বর্তমান তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়ামের বেশ কিছু অংশ বায়ুমণ্ডলে মিশে যায় এবং তা ধীরে ধীরে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে ও অধঃক্ষিপ্ত হতে শুরু করে। প্রথমে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও শেষমেষ সোভিয়েত ইউনিয়ন তা স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
‘অ্যাকিউট রেডিয়েশন সিন্ড্রোম’ এর ফলে নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের ২ জন কর্মীর সেদিন রাত্রেই মৃত্যু হয় এবং পরবর্তী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও ২৮ জন মানুষ মারা যান। বিস্ফোরণ কেন্দ্র থেকে ৩০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের “এক্সক্লুশন জোন” চিহ্নিত হয় এবং আনুমানিক এক লক্ষ (মতান্তরে সাড়ে তিন লক্ষ) মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে ফেলা হয়। বিস্ফোরণের ২০ বছর পর আশেপাশের অঞ্চলে ৬৫০০ থাইরয়েড ক্যানসারের ঘটনা চিহ্নিত হয়। গবেষকরা মনে করেন এই শহর এখনও আগামী ২০০০০ বছর মনুষ্য বসবাসের অনুপযুক্ত থাকবে।
বিস্ফোরণের পরেই কেন্দ্রস্থলের প্রায় ৪ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে সমস্ত গাছপালা তেজস্ক্রিয়তার কারণে লালাভ বর্ণ ধারণ করে এবং এই অঞ্চল ‘ রেড ফরেস্ট’ নামে পরিচিত হয়।
কিন্তু তেজস্ক্রিয় বিকিরণের এই প্রবল প্রতিকূলতার মাঝেও জীবজগৎ এখানে যেভাবে গত ৩০ বছরে বিকশিত হয়েছে তা রীতিমতো অবাক করার মত বিষয়। পরবর্তী কালে সেখানে অনেক গাছপালা জন্মায় যা ধীরে ধীরে বনের রূপ নেয় এবং বন্য জীবজন্তুর সংখ্যা ও বৈচিত্র্য উভয়েই উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা যায় বাদামি ভল্লুক ও ইউরোপীয় বাইসন সহ অনেক নতুন বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি যাদের অতীতে এই শহরে দেখা মেলেনি। ২০১৫ র এক গবেষণা প্রমান করে আশেপাশের অঞ্চলের তুলনায় এখানে নেকড়ের মত কিছু প্রজাতি প্রায় পাঁচ গুন বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবজগতের এরকম আশ্চর্য বিস্তৃতির একমাত্র কারণ মানুষের অনুপস্থিতি । তেজস্ক্রিয়তাকেও প্রকৃতি নিজের মতো করে মানিয়ে নিতে পারে , মানুষের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ কে নয়।