হেস্টিংসের শাসনকালে আরেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ।
মহীশূরের অশ্বারোহী বাহিনীর প্রধান হায়দার আলী সেখানের রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সর্বাধিনায়কে পরিণত হন এবং সেনাবাহিনী, রাজস্ব ও শাসনব্যবস্থাকে সুসংগঠিত করে মহীশূরকে শক্তিশালী করে তোলেন।
প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৬৭-৬৯) ওয়ারেন হেস্টিংসের বাংলার গভর্নর পদে বসার অনেক আগেই প্রায় অমীমাংসিত ভাবেই শেষ হয়েছিল ।
হেস্টিংস হায়দারের শক্তি বৃদ্ধির দিকে সতর্ক নজর রেখেছিলেন। কিন্তু এদিকে মাদ্রাজে কোম্পানির কূটনৈতিক অপদার্থতা কোম্পানিকে মিত্র হীন করে ফেলেছিল। মারাঠা নেতা নানা ফড়নবীশ হায়দার আলী ও নিজামের সঙ্গে কোম্পানির বিরুদ্ধে ত্রিশক্তি চুক্তি সম্পাদন করতে সমর্থ হন। তখন হায়দার আলী নব্বই হাজার অশ্বারোহী সেনা নিয়ে কোম্পানির অধিকৃত অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ আরম্ভ করেন ও আর্কট নগরী অধিকার করেন। হায়দারের প্রবল দাপটে বক্সার যুদ্ধ জয়ী প্রতিভাবান সেনাপতি হেক্টর মুনরো পলায়ন করতে বাধ্য হন।
কোম্পানির এই চরম দুর্দশার সময়ে ওয়ারেন হেস্টিংস দুর্দান্ত বিচক্ষণতা ও কূটনৈতিক বুদ্ধির পরিচয় স্বরূপ মারাঠাদের সাথে সলবাই এর সন্ধি করেন এবং বেরারের ভোঁসলে রাজা ও হাইদ্রারাবাদের নিজামকে হায়দার আলির পক্ষচ্যুত করেন। অপরদিকে মাদ্রাজের গভর্নর কে অপদার্থতার জন্য পদচ্যুত করেন এবং হেক্টর মুনরো কে অপসারিত করে সেনাপতি স্যার আয়ার কূট কে সেনাদল পরিচালনা করার আহ্বান জানান।
স্যার আয়ার কূট ” ব্রিটিশ জাতির সামরিক শৌর্য প্রদর্শনের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার আহ্বান ” এ সাড়া দিয়ে কুদালোর, পোর্টোনোভো, পল্লীলোর ও কোলিঙ্গুরের যুদ্ধে হায়দার আলী কে পরপর পরাজিত করেন (১৭৮১) । হায়দার আলী ১৭৮২ তে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর পুত্র টিপু সুলতান যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন।
এদিকে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে ইংরেজ-ফরাসী শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হয় ও ফরাসীরা ভারতে ইংরেজ বিরোধীতা ত্যাগ করে। ফলে টিপু মিত্র হীন হয়ে পড়ে।
ওদিকে মাদ্রাজের গভর্নর ম্যাকার্টনি যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির ফলে ধৈর্য্য হারিয়ে সন্ধির প্রস্তাব দেন। ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি (১৭৮৪) দ্বারা দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ সমাপ্ত হয়। ওয়ারেন হেস্টিংস বেজায় অখুশী হন। তাঁর লক্ষ্য ছিল মহীশূর কে সমূলে ধ্বংস করা। কিন্তু এই সন্ধি তাতে বাধা সৃষ্টি করে।
( ** ইঙ্গ-মহীশূর সম্পর্ক পরবর্তী সময়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে)